Blogroll

Sunday, April 14, 2013

দেশে ইউরেনিয়াম পাওয়া গেছে

দেশে খনিজ পদার্থ ইউরেনিয়ামের সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি)। পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা এবং বৃহত্তর সিলেট ও ময়মনসিংহে নদীবাহিত বালুতে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আরও কয়েক প্রকার ভারী খনিজ (মিনারেল) ও রাসায়নিকের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আহরণযোগ্য ইউরেনিয়াম রয়েছে।
ইউরেনিয়াম মহামূল্যবান একটি পদার্থ। পারমাণবিক গবেষণা, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং অত্যাধুনিক সামরিকশিল্পে এটি একটি অপরিহার্য উপাদান। এ ছাড়া যেসব গুরুত্বপূর্ণ পদার্থ ও ভারী খনিজের সন্ধান পাওয়া গেছে, বিশ্ববাজারে সেগুলোর দাম এবং চাহিদাও প্রচুর। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং জিএসবির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম মোস্তফা জানান, বিষয়টি সম্পর্কে নিবিড় জরিপ ও অনুসন্ধানের জন্য জিএসবিকে একটি প্রকল্প তৈরি করতে বলা হয়েছে। এটি তৈরির প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে আছে।
পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার বালুতে উল্লিখিত খনিজ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আহরণের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরূল ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, ব্রহ্মপুত্র যেখানে বাংলাদেশে ঢুকেছে, সেই এলাকায় মূল্যবান ও দুষ্প্রাপ্য খনিজ পদার্থ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এমনকি সেখানে সবচেয়ে দামি খনিজ প্লাটিনাম রয়েছে বলেও শোনা গেছে। সরকারের উচিত দ্রুত প্রকল্প নিয়ে এগুলোর আহরণে পদক্ষেপ নেওয়া। ইউরেনিয়ামের ব্যবহার প্রসঙ্গে বদরূল ইমাম বলেন, ‘আমাদের দেশে সরাসরি এটি ব্যবহার করা যাবে না। এটি বাণিজ্যিকভাবে আহরণের পর বিশ্ববাজারে বিক্রি করা যাবে।’
সরকারি সূত্রগুলো জানায়, জিএসবি যে প্রকল্পটি তৈরি করছে, তার অধীনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী খনিজ ও রাসায়নিকের বিস্তৃতি, আহরণযোগ্য পরিমাণ, আহরণের পদ্ধতি প্রভৃতি বিষয়ে জরিপ ও অনুসন্ধান চালানো হবে। এই প্রকল্পের সঙ্গে প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, নৌপরিবহনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগও সম্পৃক্ত থাকবে।
জিএসবি এর আগে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশের এলাকায়ও ইউরেনিয়ামের সন্ধান পেয়েছিল। কিন্তু তা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আহরণযোগ্য ছিল না। এরপর ১৯৮৯ সালে উল্লিখিত নদীগুলোর বয়ে আনা বালুতে গুরুত্বপূর্ণ ভারী খনিজ ও রাসায়নিকের সন্ধান পাওয়া যায়। এর ভিত্তিতে কার্বন মাইনিং বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে সরকার ব্রহ্মপুত্র, যমুনার প্রায় চার হাজার হেক্টর চরাঞ্চল অনুসন্ধান জরিপের জন্য বন্দোবস্ত দেয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে কুড়িগ্রাম জেলার যমুনার বালুতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ইউরেনিয়ামসহ কয়েক প্রকার ভারী খনিজের নিশ্চিত উপস্থিতির কথা বলা হয়।
ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর জিএসবি পদ্মা, যমুনার বালুর রাসায়নিক ও খনিজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের জন্য একটি বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়। এর অধীনে পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার অন্তত ১০টি স্থানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ২০ মিটার গভীরতা থেকে বালুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ওই সব নমুনা দেশে ও বিদেশের গবেষণাগারে বিশ্লেষণ করা হয়। তার ফলাফলে দেখা গেছে, ওই নদীগুলোর বালুতে আহরণযোগ্য ভারী খনিজ ও রাসায়নিকের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ। অথচ ৭ শতাংশ থাকলেই তা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আহরণযোগ্য বিবেচিত হয়। প্রতি এক টন বালুতে যদি এক গ্রাম ইউরেনিয়াম পাওয়া যায়, তাহলে তা বাণিজ্যিকভাবে আহরণযোগ্য। সেখানে পাওয়া ইউরেনিয়ামের পরিমাণ এর চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশে ইউরেনিয়াম পাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে জিএসবির মহাপরিচালক সিরাজুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, কার্বন মাইনিংয়ের অনুসন্ধান এবং জিএসবির বিশেষ কার্যক্রমের ফলাফল প্রায় একই রকম ইতিবাচক ও উৎসাহব্যঞ্জক। এর ভিত্তিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সুযোগ আছে।
পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার বালুর রাসায়নিক বিশ্লেষণে যেসব মূল্যবান ও দুষ্প্রাপ্য পদার্থ পাওয়া গেছে, তার মধ্যে রয়েছে ট্রিটানিয়াম, বেরিয়াম, জিরকন, স্ট্রনটিয়াম, রুবিডিয়াম, ক্রোমিয়াম, ট্যান্টালাম, নিকেল, নিওবিয়াম, রুথেনিয়াম, ইন্ডিয়াম ও অসমিয়াম। বিভিন্ন শিল্পে এসব মৌলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার রয়েছে।
প্রাপ্ত ভারী খনিজসমূহের মধ্যে ইলমেনাইট ব্যবহূত হয় ছাপাখানা, কাগজকল, রাবার ও সিনথেটিক শিল্প, ওষুধশিল্প ও ইলেকট্রনিক শিল্পে। মোনাজাইট ব্যবহূত হয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কোয়ার্টজ ব্যবহূত হয় কাচশিল্পে। এ ছাড়া নিওকোক্সেন, জিরকন, গারনেট, গোয়েথাইট, মিকা, সিলিমেনাইট, কায়ানাইট গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহূত হয়।

No comments:

Post a Comment