Blogroll

Friday, April 12, 2013

Bangladesh University of Engineering and Technology

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠা:          ১৯৬২
ধরন:             পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
আচার্য:           রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান
উপাচার্য:         ডঃ এ এম এম শফিউল্লাহ
ছাত্র:              ৪০০০
অনুষদ:          ৫
অবস্থান:         ঢাকা, বাংলাদেশ
প্রাঙ্গণ:           শহরের কেন্দ্রস্থলে, ৭৬.৮৫ একর (০.৩১ km²)
ডাকনাম:        BUET
সংযুক্তি:         বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন
ওয়েবসাইট:    http://www.buet.ac.bd/



বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (Bangladesh University of Engineering and Technology) (সংক্ষেপে, বুয়েট) বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সরকারী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় । এটি ঢাকা শহরের পলাশী এলাকায় অবস্থিত। প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী এখানে প্রকৌশল, স্থাপত্য, পরিকল্পনা ও বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করেন।
প্রতিষ্ঠার কথা
বুয়েট উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে জরিপকারদের জন্য একটি জরিপ শিক্ষালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বুয়েট শুরুতে ঢাকা সার্ভে স্কুল নামে প্রতিষ্ঠিত হয় নলগোলায়, ১৮৭৬ সালে। এসময় ব্রিটিশ ভারত সরকার কাজের সুবিধার জন্য জরিপকারদের এই শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করে। ১৯০৫ সালে ঢাকার তৎকালীন খাজা আহসানউল্লাহ এ বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহী হন এবং মুসলমানদের শিক্ষাদীক্ষার অগ্রগতির জন্য বিদ্যালয়ে ১.১২ লক্ষ টাকা দান করেন। তাঁর মহৎ অনুদানে এটি পরবর্তীতে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষালয় হিসেবে প্রসার লাভ করে এবং তাঁর স্বীকৃতি হিসেবে ১৯০৮ সালে বিদ্যায়নটির নামকরণ করা হয় আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল নামে। আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল তিন বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স দিতে শুরু করে পুরকৌশল, তড়িৎকৌশল এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগে। শুরুতে একটি ভাড়া করা ভবনে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম চলত। ১৯০৬ সালে সরকারী উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের কাছে এর নিজস্ব ভবন নির্মিত হয়। এস্থানের একটি উচুঁ চিমনি কিছুদিন আগেও এই স্মৃতি বহন করত। ১৯২০ সালে এটি বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হয়। শুরুতে বিদ্যালয়টি ঢাকা কলেজের সাথে সংযুক্ত ছিল। পরবর্তীতে এটি জনশিক্ষা পরিচালকের অধীনে পরিচালিত হতে থাকে। মিঃ এন্ডারসন এর প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। এরপর ১৯৩২ সালে শ্রী বি. সি. গুপ্ত ও ১৯৩৮ সালে জনাব হাকিম আলী অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাংলার শিল্পায়নের জন্য তৎকালীন সরকার ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তখন এতদঞ্চলে দক্ষ জনশক্তির অভাব দেখা দেয়। তৎকালীন সরকার নিযুক্ত একটি কমিটি যন্ত্র, তড়িৎ, কেমি ও কৃষি প্রকৌশলে ৮ বছর মেয়াদী ডিগ্রী কোর্সে ১২০ জন ছাত্রের জন্য ঢাকায় একটি প্রকৌশল কলেজ স্থাপন এবং স্কুলটিকে তৎকালীন পলাশী ব্যারাকে স্থানান্তর করে পুর, যন্ত্র, ও তড়িৎ কৌশলে ৩ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্সে ৪৮০ জন ছাত্র ভর্তির সুপারিশ করেন। ১৯৪৭ সালের মে মাসে সরকার ঢাকায় একটি প্রকৌশল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন ও ছাত্র ভর্তির জন্য বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের শিবপুরস্থ বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ঢাকায় আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে পরীক্ষা নেয়া হয়।
১৯৪৭ এর দেশবিভাগের ফলে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলের মুষ্টিমেয় কয়েকজন শিক্ষক ছাড়া বাকী শিক্ষকদের সবাই ভারতে চলে যান ও ভারত থেকে ৫ জন শিক্ষক এ স্কুলে যোগদান করেন। ১৯৪৭ এর আগস্ট মাসে এটিকে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রুপে উন্নীত করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ হিসেবে। জনাব হাকিম আলী এর অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারীতে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান সরকার এই কলেজটিকে অনুমোদন দেন এবং এটি তখন পুর প্রকৌশল, তড়িৎ প্রকৌশল, যন্ত্র প্রকৌশল, কেমি কৌশল, কৃষি প্রকৌশল ও টেক্সটাইল প্রকৌশল বিভাগে চার বছর মেয়াদী ব্যাচেলর ডিগ্রী এবং পুর প্রকৌশল, তড়িৎ প্রকৌশল ও যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগে তিন বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা প্রদান করতে শুরু করে। তবে শেষ পর্যন্ত কৃষি ও টেক্সটাইলের পরিবর্তে ধাতব প্রকৌশল অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৫৬ সালে কলেজে সেমিস্টার প্রথা চালু হয় ও নতুন পাঠ্যক্রম অনুমোদিত হয়। ১৯৫৭ সালে ডিগ্রী কোর্সে আসন সংখ্যা ১২০ থেকে বাড়িয়ে ২৪০ করা হয়। ১৯৫৮ সালে কলেজ থেকে ডিপ্লোমা কোর্স বন্ধ করে দেয়া হয়।
এর মধ্যে ১৯৫১ সালে টি. এইচ. ম্যাথুম্যান এবং ১৯৫৪ সালে ডঃ এম. এ. রশিদ কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। এসময়ে এগ্রিকালচারাল এন্ড মেকানিক্যাল কলেজ অব টেক্সাস (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) ও আহসানউল্লাহ কলেজের সাথে যৌথ ব্যবস্থাপনার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ফলে ওখান থেকে অধ্যাপকগন এদেশে এসে শিক্ষকতার মান, ল্যাবরেটরী ও পাঠ্যক্রম উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষকদের মানোন্নয়নের জন্য কিছু শিক্ষককে স্নাতকোত্তর পড়াশোনার জন্য টেক্সাস এ. এন্ড এম. কলেজে পাঠানো হয়। এসময় এশিয়া ফাউন্ডেশন লাইব্রেরীকে কিছু প্রয়োজনীয় বইপত্র দান করে এবং রেন্টাল লাইব্রেরী প্রথা চালু করা হয়। কলেজ থাকা অবস্থায় ছাত্রদের জন্য কেবল দুটি ছাত্রাবাস ছিলঃ মেইন হোস্টেল (বর্তমান ডঃ এম. এ. রশীদ ভবন) ও সাউথ হোস্টেল (বর্তমান নজরুল ইসলাম হল)
পাকিস্তান আমলে ১৯৬২ সালের ১ জুন তারিখে এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করে নাম দেয়া হয় পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয় (East Pakistan University of Engineering and Technology, or EPUET)। তৎকালীন কারিগরী শিক্ষা পরিচালক ডঃ এম. এ. রশিদ প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন। অধ্যাপক এ. এম. আহমেদ প্রকৌশল অনুষদের প্রথম ডীন নিযুক্ত হন। খ্যাতনামা গণিতজ্ঞ এম. এ. জব্বার প্রথম রেজিস্ট্রার ও মমতাজউদ্দিন আহমেদ প্রথম কম্পট্রোলার নিযুক্ত হন। ডঃ এম. এ. রশিদের যোগ্য নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়টি দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়রূপে প্রতিষ্ঠিত হবার পরে ছাত্রদের জন্য তিনটি নতুন আবাসিক হল তৈরী করা হয়। অধ্যাপক কবিরউদ্দিন আহমেদ প্রথম ছাত্রকল্যাণ পরিচালক পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬২ সালেই প্রথম স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদে স্থাপত্য বিভাগ গঠন করা হয়, এই বিভাগের জন্য টেক্সাস এ. এন্ড এম. কলেজের কয়েকজন শিক্ষক যোগদান করেন। এভাবে প্রকৌশল ও স্থাপত্য এই দুটি অনুষদে পুর, যন্ত্র, তরিৎ, কেমি ও ধাতব প্রকৌশল এবং স্থাপত্য বিভাগ নিয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য ১৯৬৪ সালে আসন সংখ্যা ২৪০ থেকে ৩৬০ জনে বৃদ্ধি করা হয়। একই বছরে বর্তমান ৭ তলা পুরকৌশল ভবন নির্মাণ শুরু হয়। ১৯৬৯-৭০ সালে আসন সংখ্যা ৪২০ জনে উন্নীত হয়। এসময় স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদে ফিজিক্যাল প্ল্যানিং নামে একটি নতুন বিভাগ চালু হয়। এটিই পরবর্তীতে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে পরিণত হয়েছে।
১৯৭১ এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরে এর নাম পরিবর্তন করে বর্তমানের নাম, অর্থাৎ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় রাখা হয়। বুয়েট ক্যাম্পাস ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এটি একটি ছোট্ট ক্যাম্পাস। ছাত্রদের আবাসিক হলগুলো একাডেমীর ভবন থেকে হাঁটার দূরত্বে অবস্থিত। বর্তমানে ক্যাম্পাসের আয়তন হল ৭৬.৮৫ একর (৩১১,০০০ ব.মি.)।
অনুষদসমূহ
১.স্থাপত্য এবং পরিকল্পনা অনুষদ
(পুরকৌশল অনুষদ, তড়িৎ এবং ইলেক্ট্রনিক কৌশল অনুষদ, প্রকৌশল অনুষদ, এবং যন্ত্র কৌশল অনুষদ। স্থাপত্য এবং পরিকল্পনা অনুষদের অধীনস্ত বিভাগ গুলো হলো স্থাপত্য বিভাগ, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, এবং মানবিক বিভাগ। )
২.পুরকৌশল অনুষদ
(পুরকৌশল বিভাগ ও পানিসম্পদ কৌশল বিভাগ।)
৩.তড়িৎ এবং ইলেকট্রনিক কৌশল অনুষদ
(তড়িৎ এবং ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগ, এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল বিভাগ।)
৪.প্রকৌশল অনুষদ
(কেমিকৌশল বিভাগ, বস্তু ও ধাতব কৌশল বিভাগ, রসায়ন বিভাগ, গণিত বিভাগ, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, এবং পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদ কৌশল বিভাগ।)
৫.যন্ত্রকৌশল অনুষদ
(যন্ত্রকৌশল বিভাগ, নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও প্রোডাকশন কৌশল বিভাগ।)
ইনস্টিটিউট
o ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন এণ্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি
o পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট
o ইনস্টিটিউট অব এপ্রোপ্রিয়েট টেকনোলজি
সেন্টার
o সেন্টার ফর এনার্জি স্ট্যাডিজ
o সেন্টার ফর এনভারনমেন্টাল এণ্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট
o ইন্টারন্যাশনাল ট্রেনিং নেটওয়ার্ক সেন্টার
o বায়ো-মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সেন্টার
o একসিডেন্ট রিসার্চ সেন্টার

আবাসিক হল সমূহ
বুয়েটে আটটি ছাত্রাবাস রয়েছে। শহীদ স্মৃতি হল তরুন শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দকৃত যাদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক আবাসস্থল নেই। হলগুলো বিভিন্ন সময়ে তৈরী করা হয়েছে। একারনে বিভিন্ন হল বিভিন্ন স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন বহন করে। প্রতিটি হলের তত্ত্বাবধানে থাকেন প্রভোস্ট। সাধারনত সিনিয়র শিক্ষকদের মধ্য থেকে প্রভোস্ট নির্বাচন করা হয়। প্রতিটি হলে তিনজন সহকারী প্রভোস্ট নিযুক্ত আছেন।
হলগুলো হলঃ
১। আহসান উল্লাহ হল
২। তিতুমীর হল
৩। নজরুল ইসলাম হল
৪। ছাত্রী হল
৫। শের-এ-বাংলা হল
৬। সোহরাওয়ার্দী হল
৭। ড. এম. এ. রশীদ হল
৮। শহীদ স্মৃতি হল

No comments:

Post a Comment